আজ ওর ১৩ তম ইন্টারভিউ। মনের ভেতর বার বার কে যেনো কুহু ডাকছে- “হবেনারে পাগলা, এবারো হবেনা”।
মন থেকে দুর্ভাবনাটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করে শার্ট ইস্ত্রিতে মন দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে আরিয়ান।
বেলা ১১টায় ইন্টারভিউ।
আর কি কি কুফা আছে তার জন্য সেগুলো ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হলো ও।
শীত আসি আসি করছে। তাই সুর্য তার পুরাটা ত্যাজ ঢেলে দিচ্ছে শহরের রাজপথে। ক্যাত ক্যাতে একটা ঘাম ঘাম অবস্থা।
‘বেটা স্কয়ার’ এর বিশাল অফিস বিল্ডিং এর এলিভেটরের সামনে দাড়িয়ে একবার চকিতে বাম হাতের ঘড়ির দিতে তাকালো আরিয়ান।
১০:৩১
কিছুটা স্বস্থি নিয়েই রিলাক্স মুডে এদিকে ওদিক তাকানোর প্রয়াশ পেলো সে। এতক্ষন সময়ের তাড়া খেয়ে আশে পাশের কোন কিছুর প্রতিই তার কোন খেয়াল ছিলো না।
আরো ৩ জন লিফটের জন্য অপেক্ষা করছে। সম্ভোবত এ অফিসেরই স্টাফ হবে, কারন তাদের সবার পোশাকের মধ্যেই কিযেনো একটা সাদৃশ্য রয়েছে। দুজন পুরুষ এবং একজন টিপটপ মহিলা। মহিলা না বলে মেয়ে বলাই সমিচীন হবে।
২৮ তলার অফিস ভবনের লিফটটা এই মুহুর্তে উপর থেকে নিচে নামছে। আর কিছুখনের মধ্যেই লিফট চলে আসবে। হঠাৎই তার পাশে দাড়ানো অন্য ৩ জনের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য এবং বিনয়ী ভাব দেখে তাদের দিকে ফিরে তাকালো আরিয়ান।
মানুষগুলো মাথাটা একটু ঝুকিয়ে কিছুটা পিছনের দিকে সরে দাড়িয়েছে। একটা আধ বয়সী পুরুষ এবং একটি কম বয়সি মেয়ে লিফটের সামনে এসে দাড়িয়েছে।
আরিয়ান মেয়েটার দিকে এক পলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো।
ইতিমধ্যেই সে বুঝে নিয়েছে সিনিয়র বস গোছের কেউ একজন হবে এই মেয়ে।
কিন্তু বসগিরির চাইতে মেয়েটার মধ্যে যা রয়েছে তা হলো- সমভ্রান্ত এবং উচ্চ ব্যক্তিত্বের ছাপ।
এই মুহুর্তে গ্রিবাটা কিছুটা উচু করে আছ মেয়েটি। দৃষ্টি সামনে লিফটের দিকে। যদিও দামি স্যুট, ব্যাগ, মোবাইল, মাথায় গুজে রাখা সানগ্লাস এমনকি হাইহিল জুতাও তার আর্থিক অবস্থানের কথা প্রমান করে কিন্তু তার হালকা ম্যাকাপ দেয়া স্ফটিক অবয়ব আর কাটাকাটা নিঁখুত দেহ বৈভব তার উন্নত ব্যক্তিত্বেরই জয়গান গাইছে।
একটা ভুল করে বসলো আরিয়ান।
অনেকটা মোহমায়ার মতোই কটা সেকেন্ড তার পার হয়ে গেছে। এরি মধ্যে লিফট চলে এসেছে। বসমেয়ে ধীর পায়ে প্রবেশ করেছে লিফটে। স্বাভাবিক ভাবে আরিয়ানও প্রবেশ করেছে লিফটের ভেতরে। কিন্তু সে খেয়াল করেনি বস মেয়েটার সাথে আসা ভদ্রলোকটি ছাড়া বাকি সবাই লিফটের বাইরে দাড়িয়ে রয়েছে। আরিয়ান একটু খেয়ার করলেই বুঝতে পারতো এই মেয়েকে সবাই সসম্মানে লিফট ছেড়ে দিয়েছে। তাদের সাথে সাথে আরিয়ানেরও উচিত ছিলো অপেক্ষা করে পরবর্তী লিফটে আসা।
হঠাৎই আরিয়ান বুঝতে পারে কিছু একটা গোলমাল আছে।
কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে। লিফটের দরজা দুপাশ থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
দ্রুত এগিয়ে বের হয়ে আসার জন্য চেষ্টা করলো আরিয়ান। লিফটের দু দুরজার মাঝে তার হাতটা রাখলো দরজা বন্ধ হওয়া থামানোর জন্য। দরজা থেমেও গেলো, কিন্তু দ্রুত এগুনোর কারনে তার হাতের মোবাইলটা হাত থেকে পরে ছিটকে চলে গেলো লিফটের অপর কোনায়।
গোবেচারার মতো মুখ করে দরজার মাঝে দাড়িয়ে কাচুমাচু করে চকিত মেয়েটার দিকে তাকালো আরিয়ান। কিছুটা ভড়কে গেছে ও। কঠিন একটা রাগত চাহনির জায়গায় কোন প্রকার বিরক্ত কিংবা আগ্রহ দেখতে না পেয়ে জানে পানি পেলো আরিয়ান। মাথা ঝুকিয়ে কিছুটা হাত বাড়িয়ে মেঝে থেকে কুড়িয়ে নিলো মোবাইলটা।
‘সরি ম্যাডাম’ বলে লিফট থেকে নেমে দাড়ালো।
*
ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছে চাকুরীপ্রার্থীরা। রুম না বলে হল রুম বলাই যথার্থ। বিশাল আকারের রুমটার অধিকাংশই সাদা। শুধু সাদা নয়, ধব ধবে সাদা। রুমের প্রতিটি জিনিসে আধুনিকতা, রুচি আর টেকনোলজির ছোঁয়া। একপাশে পুরো দেয়াল জুড়ে দিগন্ত ছোয়ানো প্রকৃতির ডিসপ্লে। দেখলে হঠাতই মনে হবে যেনো জানালার ওপাশের সুন্দর সবুজ প্রকৃতি দেখা যাচ্ছে। আসলে ওটা সম্পুর্ণই টেকনোলজির ক্যামেফ্ল্যাজ। ওয়াল, জানালা, ফ্রেম, জানালার বাইরের দৃশ্য সবই সুপার সনিক ডিসপ্লের খেলা।
ঠিক ১২ টা ২৫ মিনিটে ওর ডাক পরলো।
আরিয়ানের সিরিয়াল ১১ নম্বর।
১০ নম্বর জন ইন্টারভিউ রুমে ঢুকে যাবার পর থেকেই আরিয়ান ঘামছে। এসি রুমে বসে ঘামাটা ওর জন্য নতুন নয়।
বিসমিল্লাহ বলে দরজার ঠান্ডা শীতল হাতল চেপে প্রবেশ করলো রুমে।
ছোটখাটো একটা হার্টবিট মিস করলো আরিয়ান। রুমের প্রধান আসনটিতে বসে আছে বস মেয়েটি।
মেয়েটি টেবিলে উপর রাখা একটা ফাইল দেখছে মনোযোগ দিয়ে।
আরিয়ান ভেবেছিলো ইন্টারভিউ বোর্ডে অন্তত জনা ৫/৬ জন মানুষ থাকবে। কিন্তু না, মেয়েটি এবং তার সংগে আসা ভদ্র লোকটি ছাড়া রুমে আর কেউ নেই।
বিশাল টেবিলের এ প্রান্তের একটি চেয়ারে বসতে বসতে সালাম দিলো আরিয়ান।
বস মেয়ে চোখ তুলে তাকালো ওর দিকে। আরিয়ানও চেয়ে আছে পরীক্ষার্থীর দৃষ্টি নিয়ে।
না, বস মেয়ের মধ্যে কোন প্রকার অস্বাভাবিকতা দেখতে পেলোনা আরিয়ান। কিছুখন আগেকার লিফটে দেখা হবার কথা বসের মনে নেই। বসদের অবশ্য এতো কিছু মনে থাকার প্রয়োজন পরে না।
বস মেয়ে : আপনি আপনার এপ্লিকেশনে লিখেছেন আপনার চাকুরিটা খুব প্রয়োজন। কেনো লিখেছেন?
এর আগের ১২টা ইন্টারভিউতে এমন প্রশ্ন আরিয়ান পায়নি, তাও আবার প্রথম প্রশ্ন।
আরিয়ান : স্যরি, সম্ভবত লেখাটা আমার ঠিক হয়নি।
বস মেয়ে : তবুও আপনি বলুন, আপনি কি ভেবে একথা লিখেছেন?
আরিয়ান : চাকুরিটার উপর ৪/৫ জন মানুষের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে তাই লিখেছিলাম।
বস মেয়ে : ওহ
আপনার সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বলছে আপনার মেধা উন্নত। আপনার অন্যান্য স্কিল, ফিজিক্যাল ষ্টেমিনা, মেন্টাল ষ্ট্রেংন্থ, আই.সিটি জ্ঞানও খুব ভালো। ‘বেটা স্কয়ার’ সব সময় দক্ষ এবং পরিশ্রমীকে গুরুত্ব দেয়। আপনি কি বলতে পারবেন ‘বেটা স্কয়ার’ আপনার কাছ থেকে কি পেতে পারে?
আরিয়ান : কাজ এবং ফলাফল শুধু মাত্র কথা বলার মধ্যে থাকেনা। এবং এও সত্যি বাস্তবতা নিরীক্ষণ করতে বাস্তবতার মধ্য দিয়েই যেতে হয়, শুধু পরিকল্পনা কিংবা বিশ্লেশনী ক্ষমতা দিয়ে তা সম্ভব নাও হতে পারে।
‘বেটা স্কয়ার’ একটি প্রতিষ্ঠিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী যা আপনার বাবা মরহুম সাজিদ মাহমুদ স্যারের সর্বোচ্চ প্রজ্ঞা, জ্ঞান, সহিষ্ণুতা, প্রত্যয়, শিক্ষা ও পরিশ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠিত। গত ৪ বছর আগে আপনার বাবার অকাল মৃত্যু আপনাকে তার স্থানে এনে দাড় করিয়েছে। কিন্তু বাবার যোগ্য উত্তরসূরী প্রমান হিসেবে আপনি ‘বেটা স্কয়ার’কে তার অবস্থানে ধরে রাখতে পেরেছেন। এপ্লাইড ফিজিক্স আপনার পড়ার বিষয় হবার পরেও ব্যবসার কঠিন সব এলগরিদম, ক্যালকুলেশন করতে গিয়ে কোন ভুল করেননি।
সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি ব্যক্তি ‘আরিয়ান’ ‘বেটা স্কয়ার’ এর জন্য বড় কোন প্রকার রেভ্যুলোশন আনা না আনায় ‘বেটা স্কয়ার’ এর কিচ্ছু যাবে আসবে না।
আর আপনারা ‘বেটা স্কয়ার’ এর জন্য কোন নিয়ন্ত্রক চেয়ে ইন্টারভিউ কল করেননি, আপনার প্রয়োজন এর পরিচালকের জন্য সামান্য একজন ‘সেক্রেটারি’।
বস মেয়ে কিছুটা আগ্রহ নিয়ে আরিয়ানের বিশ্লেষন ধর্মী কথাগুলো শুনছিলো। তার পাশে বসে থাকা মাঝ বয়সি মানুষটি হলো তার আংকেল ফারহান সাহেব। আংকেলের দিকে চোখাচোখি হলো তার। তিনি উপর নিচ মাথা নেড়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেন।
বস মেয়ে : সেক্রেটারি’কে সামান্য কি করে বলা যায়? বলা হয়ে থাকে পরিচালকের চাইতে তার সেক্রেটারি’র মেধাই বেশি কাজে লেগে থাকে।
আরিয়ান : আপনার এবং আপনার বাবার ক্ষেত্রে এ কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়।
তবে, ‘বেটা স্কয়ার’ এর নতুন প্রজেক্টগুলো বিশেষ করে- “হিউমেন হিমোগ্লোবিন প্রজেক্ট”, প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার “কপি ট্র্যাক’ প্রজেক্ট, ফিলিপিন এর আকলানে “হিউম্যান স্কিল শেয়ারিং প্রজেক্ট”, আজারবাইজান-উজবেকিস্থান এর ছিটমহল এলাকায় “টেকনো ইলেকট্রো প্ল্যান্ট” গুলো এখন বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বের জন্য চ্যালেঞ্জ। এ প্রজেক্টগুলোর সফলতা নির্ভর করছে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত এবং সময়োপযোগি পরিকল্পনার উপর। এক্ষেত্রে-
এবার বস মেয়ের চোখে একই সাথে আশ্চার্য এবং ব্যস্ততার ভাব ফুটে উঠলো। সুন্দর অথচ নিরেট চোখগুলো কিছুটা বড় হতে চাইলো।
বস মেয়ে : ‘বেটা স্কয়ার’ এর এসকল প্রজেক্ট সম্পুর্ণ সিক্রেট। আমাদের লোক ছাড়া বাইরের কেউই এ প্রজেক্টগুলো সম্পর্কে জানার কথা নয়। বিশেষ করে এইসবগুলো প্রজেক্টই পর্যবেক্ষন অবস্থায় রয়েছে। পর্যবেক্ষন সম্পন্ন হলে তারপর আমরা এগুলো নিয়ে জনসম্মুখে আসার কথা ভাববো। কি করে জানলেন আপনি?
আংকেল অর্থাৎ ফারহান সাহেবও এবার নড়েচড়ে বসলেন।
আরিয়ান : টেকনোলজি এবং সাথে উইকিলিস্ক এর মতো অনেক হ্যাকিং মাধ্যমের কারনেই এখন টপ সিক্রেটগুলো সহজেই ওপেন সিক্রেট হয়ে যায়। এটা আর এমন কি?
জবাবটা আংকেল ভদ্রলোককে আস্বস্ত করলেও বস মেয়েকে নিরস্ত্র করতে পারলোনা।
বস মেয়ে : আর কি কি জানেন ‘বেটা স্কয়ার’ সম্পর্কে?
আরিয়ান : না, এর বাইরে আমার তেমন কিছুই জানা নেই। ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য কাজে লাগবে ভেবে এ তথ্যগুলো আমি কালেক্ট করেছি।
আরো কিছু প্রশ্ন করে আরিয়ানকে বিদায় করা হলো।
*
সামান্থা বিচলিত। তার রুমে এমাথা ওমাথা পায়চারি করছে। কপাল কিছুটা কুঞ্চিত। রুমের মাঝের সোফায় এক পাশে আংকেল বসে আছে। তার হাতে কোম্পানীর কিছু ডকুমেন্ট। সেগুলো পড়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে।
না, কোম্পানীর রিপোর্ট মোতাবেক এই মুহুর্তে ৭টি প্রজেক্ট রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে। সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে সেগুলোর প্রপোজাল এবং প্ল্যান তৈরী করা হচ্ছে। এগুলো বাইরে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই।
সামান্থা : আংকেল আপনি আগামীকাল সকাল ৯টায় একটি জরুরী মিটিং কল করেন। কোম্পানীর সকল প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবশ্যই মিটিং এ থাকা চাই।
ফারহান সাহেব : আচ্ছা।
*
সকাল ১১:৩০। সামান্থার অফিস রুম।
ফারহান সাহেব : কিছুইতো বুঝতে পারছিনা সামান্থা, আজ মিটিং এ আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে আমাদের এ প্রজেক্টগুলোর কথা বাইরের মানুষ জানার কথা নয় এবং জানেও না, শুধু মাত্র ঐ ছেলে ছাড়া।
সামান্থা : কোথাও কোন ঘাপলা অবশ্যই আছে। আংকেল, তুমি আমাদের ঐ ৭টি প্রজেক্ট এর সব কাগজগুলো আবার আমার মেইলে পাঠাও। আর প্রজেক্ট স্টাফদেরকে বলো প্রজেক্ট সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো আরো ভালো করে পর্যবেক্ষন করতে। স্টাফরা নিজেদের ভালো সেলারী, চাকুরীর কথা ভুলে গিয়ে আমাদের তথ্য বাইরে পাচার করবে তাও আবার এমন তথ্য যেগুলোতে অন্য কারো কোন লাভ হবার সম্ভাবনা নেই, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
ফারহান সাহেব : মা, তুমি অযথা অতিরিক্ত চিন্তা করে অসুস্থ্য হয়ে যেওনা। আশা করছি এ ব্যপারে ভালো কোন সিদ্ধান্তে আমরা পৌছাতে পারবো।
*
রাত ১১ টা প্রায়।
প্রতিদিনের মতো আজও সামান্থা তার বাসভবনের ব্যলকনিতে বসে আছে। চিন্তাটা তার মাথা থেকে যাচ্ছেই না। গত দুদিন ধরে তার সব ধরনের চেষ্টার রেজাল্ট জিরো। কেউ কিচ্ছু জানেনা। এমনকি তার সিক্রেট সার্ভিস তাকে সন্ধ্যায় জানিয়েছে তাদের কোন প্রজেক্ট সম্পর্কে অনলাইনে কোথাও কোন তথ্য নেই।
তবে?
বাবা-মা’র কথা খুব মনে পরছে ওর। তারা থাকলে এই বয়সে তাকে এমন কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে ভাবতে হতোনা। ….
সামনের টিপয়ে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠলো….
সামান্থা : হ্যালো
আরিয়ান : আমি আরিয়ান
সামান্থা : হুম
আরিয়ান : আমি সম্ভোবত আপনাকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম!
সামান্থা : তাই?
আরিয়ান : হুম
দুজনেই কিছুখন চুপ।
সামান্থা চেয়ে আছে সামনে বাগানে নিয়ন লাইটের নিচে উড়তে থাকা অসংখ্যা ছোট ছোট পোকার দিকে।
সামান্থা : জানেন, আমার জীবনে আমি কখনো একটা পোকাও মারিনি। অথচ কি আশ্চার্য মাঝে মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় চোখের মধ্যে এসে অযথাই পোকা পড়ে। আংগুলের চাপে হোক অথবা চোখের নোনা জলে ডুবে হোক পোকাটা শেষমেষ মারা পরে যায়।
ভয়ংকর রকম ঘাবড়ে যায় আরিয়ান। উপরতলার ক্ষমতাধর মানুষগুলোর বিশ্বাস নেই। পথের জঞ্জাল সাফ করার অনেক কিছু ওদের জানা থাকে।
আরিয়ান : আমি কি রাখবো?
সামান্থা : সেই ভালো।
ফোন রেখে দিয়ে ঘরে পায়চারি করে আরিয়ান। জীবনভর ভয় পেতে পেতে ভয়ের সাথে এক প্রকার সখ্যতা গড়ে উঠেছে তার। হঠাতই কিছুটা শীত লাগছে গায়ে। বুকের উপর দুহাত চেপে রেখেছে ও।
সিদ্ধান্তে পৌছালো- এভাবে ফোন করাটা তার ভুল ছিলো। তার উপরে অবিশ্বাসের মাত্রাটা বেড়ে যাবার জন্য এমন একটা ফোনটা কলই যথেষ্ট। লাভতো কিছু হলোইনা, উপরন্তু চেপে বসেছে হুমকীর গ্যাড়াকল।
প্রতিবারই কোননা কোন ভাবে তার চাকুরী পাবার পথে একটা বাঁধা আসেই। এবার আরো ভালো ভাবেই এসেছে। অথচ, এই মুহুর্তে চাকরীটা খুব বেশী প্রয়োজন। বাবা, মা, আর দুই ভাই বোন তার উপার্জনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ৩টা টিউশন এবং অনলাইন বেইজড একটি সামান্য আয় দিয়েই এখন সবাইকে চলতে হচ্ছে। বড় ছেলে হিসেবে এ দায়িত্ব তার উপর পরেছে। সবাই গ্রামে থাকে। মেঝো ভাইটা এবার গ্রামের কলেজ থেকে এইচ.এস.সি দিচ্ছে, আর ছোট বোনটা ক্লাস নাইনে পড়ে। বাবা টেলিফোন বিভাগের ছোট পোষ্ট থেকে রিটায়ার্ড করেছেন। সামান্য পেনশন তাদের খরচের অল্প অংশই পুরন করতে পারে। এক কথায় টেনেটুনেই তাদের চলতে হয়।
*
ছোট বেলা থেকেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখেছে সামান্থা। বাবা-মা দুজনই ভয়ংকর কার একসিডেন্টে মারা যান প্রায় ৪ বছর হলো। নিকট আত্মীয় বলেতে তেমন কেউ নেই তার। দুস্পর্কের এক চাচা ফারহান উদ্দিন তার পাশে এসে না দাড়ালে বাবার বিশাল ব্যবসা আর সব কিছু তার পক্ষে সামাল দেয়াটা অসম্ভব ছিলো।
বিশাল বড় বাড়িতে সামান্থা একাই থাকে। পরিচারিকা, গার্ড, মালি, দাড়োয়ান সব মিলিয়ে ৬ জন। ওদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
ওর রুমগুলো নদীর দিকে। সামনের বিশাল আকারের বেলকনিটাতে বসলে কাছের নদীর পানির ভেজা আমেজ পাওয়া যায়।
সময় তাকে কঠিন এক অবস্থায় এনে দাড় করেছে। দেশ বিদেশের বিশাল আকারের ব্যবসা সামাল দিতে গিয়ে সে রীতিমত হাপিয়ে উঠেছে। যদিও বাবার মতো তারও রয়েছে অসীম ধৈর্য্য শক্তি ও কায়িক পরিশ্রমের মতো শারিরিক ক্ষমতা। নিয়মিত ব্যায়াম, জিম, ইয়গা আর পরিমিত খাদ্যাভাস তাকে পরিপুর্ণভাবে নিরোগ এবং দৃঢ় করেছে।
দায়িত্ব নেয়ার প্রথমদিকে অনেক কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে ছিলো। ধীরে ধীরে সে তার ক্ষমতা আয়ত্ত করে নিয়েছে।
ভাবতে শুরু করেছে যে, তার চিন্তা এবং পরিকল্পনাগুলো অনেকটাই নিঁখুত।
৭টি প্রজেক্টের টপ সিক্রেট তথ্য বাইরের একটা সামান্য মানুষের কাছ থেকে শোনার পর থেকে সামান্থার শুধুই মনে হচ্ছে, “কোন ভুল হচ্ছেনাতো?”
পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন করলো সামান্থা।
সামান্থা : আংকেল, ইন্টারভিউতে যে ২ জনকে সিলেক্ট করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে কি ভেবেছেন?
ফারহান উদ্দিন: তুমিতো বলেছিলে ব্যপারটা তুমিই দেখবে, তাই আমি কিছু ভাবিনি। রিটেন এবং ভাইভার পয়েন্ট মিলে আরিয়ান সাহেবই প্রথম অবস্থানে আছেন। ২য় অবস্থানে আছেন সালমান হায়দার।
সামান্থা : আচ্ছা আংকেল, আমি আরো একটু ভেবে দেখি।
নিজে নিজে ভাবতে থাকে সামান্থা। ২/১টা হলেও কথা ছিলো, ৭টা সিক্রেট প্রজেক্ট এর তথ্য কি করে ছেলেটার কাছে গেলো? তাছাড়া অন্য কোথাও থেকেই এই তথ্য পাওয়ার কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যপারটা ওর কাছে আশ্চর্য লাগছে। কি করে সম্ভব? কি করবে ও এখন?
ছেলেটা কি তার কোম্পানীর কোন প্রতিযোগি কোম্পানীর ভাড়া করা লোক? যদি তাই হয়ে থাকে তবেতো এই ছেলেকে এই কোম্পানীতে চাকরি দেয়াটাও মারাত্বক রিস্কি!
ছেলেটা কি উদ্দেশ্যে ফোন দিয়েছিলো?
ছেলেটাকে হুমকি দেয়াটাকি ভুল হলো?
সাত পাচ ভাবতে ভাবতে সোফায় মাথা এলিয়ে দেয় সামান্থা। চোখ দুটো ক্লান্তিতে বুজে আসে।
এভাবে কতটা সময় কেটেছে জানেনা সামান্থা।
হঠাতই সোজা হয়ে বসে ও। রিষ্ট ওয়াচটার দিকে তাকায়।
রাত ৮ টা ১৩ মিনিট।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল লগটা থেকে ইপ্সিত নম্বরটায় ডায়াল করে।
৫ বার রিং বাজার পর ও প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ হয়।
আরিয়ান : জি, বলুন।
সামান্থা : আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
আরিয়ান : বলুন, আমি শুনছি।
সামান্থা : ফোনে নয়, সামনাসামনি। আপনি কি ব্যস্ত?
আরিয়ান : আমি একটা টিউশনিতে আছি। ৮:৩০ পর্যন্ত। এরপর বাসায় যাওয়া ছাড়া আমার কোন কাজ নেই।
সামান্থা : আচ্ছা।
*
নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে সামান্থা। বাছিলা থেকে উত্তরা ১৮নম্বর প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ। জ্যাম না থাকায় দ্রুতই চলে এসেছে। আরিয়ানের ভাড়া বাসার সামনে লুকিমো-৭ থেকে নামলো সামান্থা। এমন জায়গায় গাড়িটা বড্ড বেমানান লাগছে যেখানে গাড়িটা বর্তমানের লেটেষ্ট মডেলের মধ্যে অন্যতম।
কিছুটা অন্ধকার জায়গাটা আর স্যাঁতস্যাঁতে। পুরোনো ধাচের বাড়িটার সামনের ল্যাম্প পোষ্টের লাইটটা নষ্ট। বার বার জলে উঠার চেষ্টা করে করে নিভে যাচ্ছে।
পাশের নদীর দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে।
ওড়নাটা গলায় ভালো করে পেঁচিয়ে নিলো সামান্থা।
৩ মিনিটের মাথায় সিড়ি বেয়ে নেমে এলো আরিয়ান।
দ্রুত পায়ে সামান্থার সামনে এসে দাড়ালো। কিছুটা বিব্রত, কিছুটা ভীত এবং কিছুটা লজ্জা নিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
সামান্থার দিকে একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিয়েছে। পাশের বাড়ির জানালা দিয়ে নিক্ষিপ্ত আলোয় বাইরে আলো আধারীর স্বপ্নময় শেড তৈরী হয়েছে।
সামান্থা সোজা হয়ে দাড়িয়ে ছিলো। গাড়ির উপর পেছন দিয়ে হাত দিয়ে হেলান দিয়ে দাড়ালো এবার।
সামান্থা : আমার এবং আমার কোম্পানী সম্পর্কে অনেক কিছুই আপনি জানেন। আমি অনেক কষ্ট করে বেটা স্কয়ারকে এ পর্যায়ে এনে দাড় করেছি। জীবন বাজি রেখে আমি এর সবগুলো দিক ঠিক রেখেছি। ৭টি প্রজেক্ট এর প্রাথমিক সাকসেস এর উপর বেটা স্কয়ার এর ভবিষ্যত অনেকটাই নির্ভর করছে। যেকোন মুল্যে আমাকে এর গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।
আমার জানা মতে এই পর্যন্ত গোপনীয়তা নষ্টের কোন কিছুই ঘটেনি। আমার সিক্রেট টিমও আমাকে সে ব্যপারে কনফার্ম করেছে।
কিন্তু আপনার কাছে যে কথাগুলো সরল স্বাভাবিক কথা, সে কথাগুলো আপনার জানাটাই আমার কাছে সব চাইতে অস্বাভাবিক। আমি বুঝতে পারছিনা কি হয়েছে।
কি হয়েছে বুঝতে পারলে সে ব্যপারে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। যা করার করতে পারবো।
আপনি কি বুঝতে পারছেন, আমি কি বলছি?
আরিয়ান : জি।
সামান্থা : তবে আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ।
আরিয়ান : আমাকে কি করতে হবে?
সামান্থা একটা মাঝারি আকারের প্যাকেট বাড়িয়ে দিলো আরিয়ানর দিকে।
সামান্থা : নিন, বাসায় গিয়ে খুলে দেখে, চিন্তা করে, বুঝে তারপর আমাকে জানান।
প্যকেটটার দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো আরিয়ান।
প্যাকেটটা আরিয়ানর হাতে দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে এলো সামান্থা।
*
দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট শক্ত করে কামড় দিয়ে ধরে রেখেছে সামান্থা।
কিছুখন আগে করে আসা বাজে কাজটার জন্য তার চরম ঘৃনা লাগছে। ব্ল্যাকমেইল এর স্বীকার হওয়াটা তার ধাতে নেই। কিন্তু আজ তার কাছে মামুলী একটা ছেলের ক্ষমতাকে অনেক বড় বলে মনে হয়েছে। আর নিজেকে মনে হয়েছে ফাদে পরা ইদুরের মতো।
মানুষ কি করে এতো নিচ হতে পারে। ক্ষমতার জন্য, টাকার জন্য মানুষ কি করে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে?
এই মুহুর্তে আরিয়ানের চেহারাটা তার কাছে জঘন্য, ঘৃন্য আর জানোয়ারের মতো লাগছে। এত সুন্দর চেহারার পেছনে কি করে এমন কদর্য লুকিয়ে থাকে।
এসব ভাবতে ভাবতে দুচোখ জলে ভরে উঠে সামান্থার।
*
প্যাকেট হাতে কতক্ষন দাড়িয়ে ছিলো আরিয়ানের জানা নেই। সম্বিৎ ফিরে বাসায় ফিরে আসে।
প্যাকেটটি বিছানার উপর রেখে রান্না ঘরে গিয়ে রান্নায় মনোযোগ দেয়।
আন মনেই ভাবতে থাকে- ছিটকে পরা আলোয় বস মেয়েটাকে অতি মায়াবীর মতো লাগছিলো। এরা কেনো যে বস হয় আরিয়ানের মাথায় আসে না। মেয়েটার কথার মধ্যেও তার ব্যক্তিত্ব আর জ্ঞান আর সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। কি সুন্দর করে কথা বলেন ওনি। প্যাকেটে কি থাকতে পারে এসব ভেবে ভেবে রান্না শেষ করে।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আরিয়ান।
তার সামনে বিছানায় পরে আছে ১০০ ডলারের ৫টি বান্ডেল। সামান্থার দেয়া প্যাকেট থেকে বের হয়েছে ওগুলো। সাথে একটা টাইপ করা চিঠি।
“তথ্যগুলো আপনি কি করে পেলেন এবং কাউকে জানিয়েছেন কিনা?- জানাবেন। অন্য কাউকে আর জানাবেন না। এই চুক্তিতে আপনাকে কিছু বকসিস প্রদান করা হলো।”
*
২ দিন পর
অফিসের শত ব্যস্ততার মাঝেও কিছুটা উৎকন্ঠা আর উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সামান্থার সময় পার হচ্ছে। বার বার ফোনটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। আশা করছে যে কোন সময় তার কাংখিত ফোনটা আসবে। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সে জানতে পারবে আসলে কি হয়েছে। কতটা ক্ষতি হয়েছে ওদের কোম্পানির। সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি করণীয় তার।
দুদিনেও কোন ফোন না পেয়ে অনেকটাই উদগ্রীব সামান্থা।
রাত ১০টা বেজে গেছে। বেলকনিতে বসে আছে ও। হাতে মোবাইল।
মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু মন সেদিকে নেই। বুঝতে পারছে না কি করবে।
শেষে অধৈর্যের জয় হলো। ফোন করলো আরিয়ানের নম্বরে।
: কাংখিত নম্বরটি এখন বন্ধ আছে। দয়া করে পরে কল করুন, অথবা…….
আশ্চার্য হয়ে মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে রইলো সামান্থা। মোবাইল বন্ধ?!!!
পরদিন
সকাল ১০ টায় সামান্থা অফিসে আসার পরই তার আংকেল ফারহান উদ্দিন সাহেব জরুরী ফাইল, সিডিউল নিয়ে আসেন। ৫ মিনিট জরুরী বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। অনেকটাই প্রাইভেট সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন উনি। উনি কিছুটা বয়স্ক হয়ে যাওয়াতেই সেক্রেটারী এপোয়েন্টমেন্ট করছে সামান্থা। যদিও শুধু তার ফ্লোরেই ৭ জন কর্মচারী রয়েছে তার কাজ গুলো সাথে সাথে সম্পন্ন করার জন্য।
আজ ফারহান সাহেব ছুটি নিয়েছেন। তাই সামান্থা অফিসে এসে সুপরিসর রুমের মাঝে রাখা সোফায় বসে আছে। পরিচারিকা এসে চা পরিবেশন করে গেলো।
এরপরই অফিসিয়াল অপারেশন অফিসার এসে কিছু জরুরী কাগজ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন।
এরপর প্রতিদিনের জরুরী চিঠি নিয়ে এলো অফিস স্টাফ তানভির। সামান্থা ইশারায় সেগুলো টেবিলের উপর রেখে যেতে বললেন।
চা খেতে খেতে চিঠিগুলো হাতে নিলো। বেশির ভাগই অফিসিয়াল বিভিন্ন চিঠি অথবা ডকুমেন্ট।
একটা প্যাকেট রেজিষ্ট্রি হয়ে আসাতে খোলা হয়নি। উপরের লেখাটা দেখে সোজা হয়ে বসলো সামন্থা।
প্রেরক- আরিয়ান এনান।
দ্রুত চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে খামটা খুলতে খুলতে উঠে দাড়ালো। নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো।
ভেতর থেকে এক পৃষ্ঠার একটি চিঠি বেরুলো। হাতে লেখা চিঠি।
ম্যাডাম,
ছোট্ট একটা গল্প।
এ বছরই মার্চ মাসে ফিলিপাইনের এক বন্ধুর কাছ থেকে ওদের দেশ ভ্রমনের ইনভাইটেশন পাই। ফিলিপাইনের ম্যানিলা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দুরে কালিবোর গা ঘেষে যে প্রমোদ দ্বীপ “বোরাকাই” সেখানে ৪ দিন বেড়ানোর সুযোগ হয়।
আমার বন্ধু ডেনিয়েল আমার জন্য যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেন তার নাম Soffia Boracay।
আমি জানি এখন আপনি কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন। কারন ফিলিপাইন এর আকলান এ আপনাদের “হিউম্যান স্কিল শেয়ারিং প্রজেক্ট” এর গুুত্বপুর্ণ মিটিং অনুষ্ঠিত হয় ঐ সময় অর্থাৎ মার্চ মাসের ১৭ তারিখ। ঐদিনই আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আকলান থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দুরে “বোরাকাই”তে যান। ১৮ মার্চ বোরাকাই সময় কাটান। এবং ১৯ মার্চ সকালে আপনি Soffia Boracay হোটেল থেকে চেক আউট করেন। কাকতালীয় ব্যাপার হলো আমিও সেদিন সেই হোটেলের ৩১৪ নম্বর রুমটিতে উঠি যে রুমটিতে আগের দিন আপনি ছিলেন।
তৃতীয় দিন রাতে সমুদ্র পাড় থেকে বাসায় ফিরে আসার পরই হঠাতই কেনো জানিনা মনে হতে লাগলো কেউ জেনো আমাকে অনুসরন করছে অথবা আমার দিকে চোখ রাখছে। রুমে ঢুকে চারিদিকে ভালো করে খেয়াল করলাম। শুনেছি এই সব হোটেলে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারন করে অনেককে ব্ল্যাক মেইল করা হয়। রুমের প্রতিটি অংশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম। কোথাও কিছু খুজে পেলাম না। না, কিচ্ছু নেই। রাতটা কাটলো অস্থিরতায়। শুধুই মনে হতে লাগলো কোন একটা ছোট্ট ফুটো দিয়ে কেউ আমাকে দেখছে। ভাবনাটা খুবই অস্বস্থিকর।
পরদিন আমার চেক আউটের দিন। ৪ টা দিন কোন দিক দিয়ে চলে গেছে বলতেই পারবোনা। সুন্দর দেখে আর অবগাহন করে মনটা পরিপুর্ণ হয়ে গেছে। খাটের এক পাশে বসে জুতার ফিতা বাধছি নিচু হয়ে। জানিনা কেনো যেনো খাটের সাইডের উচু ফোম দেয়া অংশে চোখ আটগে গেলো। দেখে মনে হলো একটা কাচের টুকরো ফোম এর কাপড়ের ফাক গলে বেড়িয়ে রয়েছে। আংগুল ছোয়ালাম। কৌতুহলী হলাম। খাট আর ওয়ালের মাঝের ফাকে হাত ঢুকাতেই মনে হলো এখানে কিছু আছে। শক্তি দিয়ে খাটটাকে ওয়াল থেকে সামান্য সড়িয়ে আনলাম। খুব সুক্ষ্ম ভাবে এখানে একটা বক্স তৈরী করা হয়েছে। কায়দা করে খুল্লাম।
চোখ বড় হয়ে গেলো। ভেতরে বসানো আছো উন্নত মানের ভিডিও এবং অডিও রেকোর্ডার।
বুঝতে পারছি জানাজানি হলে কেলেংকারি হয়ে যাবে। আর শেষ পর্যন্ত কি হবে। কিন্তু অন্য দেশের মানুষের পক্ষে কি আসলে আইন কাজ করবে? ফেসে যাওয়ার ভয় হতে লাগলো। সিদ্ধান্ত নিলাম না জানার ভাব ধরে থাকবো। খাটটা আবার জায়গা মতো রাখার আগে রেকোর্ডার থেকে এর মেমোরি কার্ডটি খুলে নিলাম।
গল্পটা এখানেই শেষ।
দেশে এসে কৌতূহল বসত মেমোরিটায় কি আছে দেখতে চাইলাম। আপনি হোটেল থেকে ফোনে অনেকের সাথে কথা বলেছেন। বিশেষ করে আপনার আংকেলের সাথে কথা বলার সময় আপনাদের সবগুলো প্রজেক্টের কথা এসেছে।
আমার ধারনা এ তথ্যগুলো আমাকে ছাড়া অন্য কারো হাতে পড়েনি। অতএব, চিন্তার কিছু নেই। আপনার প্রোজেক্টগুলো সিক্রেটই আছে। মেমোরিটাকে আমি কোন কপি করাই নি কিংবা কাউকে দেইনি। খুব গুরুত্বের সাথে আগলে রেখেছিলাম। এই চিঠির খামের ভেতরে হাত দিলে স্কচটেপে আটকানো অবস্থায় মেমোরিটি পাবেন।
পুনশ্চ: আমি নিতান্তই দরিদ্র। আর জানেনতো দরিদ্ররা অর্থের দ্বারাই বেশি পথভ্রষ্ট হয়। আমি আমার জীবনের পথটা ঠিক রাখতে চাই, যে কোন মুল্যে। তাই আপনার দেয়া “বকসিস” রাখতে পারলাম না। আপনার একাউন্টে জমা করে দিলাম।
আপনার ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হোক।
ইতি- “পোকা”
*
পরবর্তি পর্ব ২- ক্ষনজন্মা