ঢাকা - কুনমিং - বেইজিং


২০১৫ এর ফেব্রুয়ারী মাস। তলপিতলপা সহ বের হলাম বাড়ি থেকে। লক্ষ্য চিনের বেইজিং।

প্রায় ২টি ঘন্টা বাংলাদেশে ইয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনে আটকে থাকলাম কাগজপত্রের ছোট খাটো জটিলতায়। শেষ মেষ যখন পাসপোর্টে সিল পরলো তখন CHINA EASTERN বিমানটা দেখার সৌভাগ্য হলো।
ফটাফট ছবি তুলে ফেল্লাম।

চীনের কুনমিং বিমান বন্দরে যখন নামলাম কানেকটিং ফ্লাইট ধরার জন্য তখন সেখানের তাপমাত্রা মাইনাস ৯ ডিগ্রি। জ্বালাময়ী শীত কাহাকে বলে টের পেলাম এয়ারপোর্টের বাসে চড়ে।

ঢাকা থেকে চীনের কুনমিং এসে পড়েছি মাত্র ২ ঘন্টায় কিন্তু এখন কুনমিং থেকে বেইজিং অর্থাৎ চায়না টু চায়না যেতে সময় লাগবে ৪ ঘন্টা।  ধৈর্য্য পরিক্ষা।


বিমানের মাঝে সিটে বসে আছি। আমার দুপাশে দুজন চীনা তরুনী তাদের নিজেদের ভাষায় চেংচোং করছে। তাদের মাঝে আমি স্ট্যাচু হয়ে বসে আছি। আমরা বাংগালীরাও কথার মাঝে দু-একটা ইংরেজী বলি, ওরাতো তাও বলে না। এক পর্যায়ে দুই তরুনিকে এক সাথে দিয়ে আমি এক পাশের সিটে গিয়ে সিট চেঞ্জ করে বসলাম, অন্তত তাদের কনুয়ের গুতোগুতি থেকে রক্ষা।



আমরা স্বেচ্ছায় সীট পরিবর্তন করাটা বিড়াট এক বিস্ময়ে রুপান্তরিত হলো। তরুনী দুজনে আমাকে ঘাড় বাকিয়ে বার বার দেখতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন পর তাদের মধ্য থেকে অপেক্ষাকৃত ছোটজন আমাকে প্রশ্নটা করেই বসলো-

Why you change your sit?
ওনার ইংরেজী শুনে মনে মনে হাসলাম। আমার মতো ইংরেজীতে কাচা।
উত্তরে জানালাম, আমি ওনাদের দুজনের মাঝে আনইজি ফিল করছিলাম, তাই।
উত্তরটা বোধ হয় তাদের মনোপুত হলোনা। আবারো জানতে চাইলো, সিট পরিবর্তন করার কারণ। এমনটি ওরা সচরাচর দেখেনা, তাই ব্যপারটা তাদের কাছে গবেষনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
আস্তে আস্তে এভাবেই কথা শুরু হলো। এক পর্যায়ে আমার পরিচয় সহ বেইজিং যাবার কারণ জানালাম। জানালাম আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কেও অনেক কিছু।
ওরাও জানালো, ওদের স্থায়ী আবাস চীনের বেইজিং শহরেই। ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলো।
আশ্চর্য হলাম যখন তাদের মধ্যকার পরিচয় জানলাম। 
পরিচয়ের পূর্বে অনুমান করে নিয়েছিলা ওরা দুজন হয় ক্লাস ফ্রেন্ড অথবা কাছাকাছি বয়সের রিলেটিভ। কিন্তু আশ্চর্য হলাম যখন যানতে পারলাম অপেক্ষাকৃত কম বয়সের মেয়েটির বয়স ২০ এবং তার সাথের জন তার মা যার বয়স ৪৬ বছর।
চীনাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে আবারো দীর্ধ ঝাড়লাম।
Ly Yean মায়ের নাম, আর মেয়ের নাম Ma Ya Xuan।
চারটা ঘন্টা কিভাবে যেনো কেটে গেলো। তাদের সাথে পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হলো। লি ইয়ান আমাকে বাংলাদেশী ভাই হিসেবে ডাকতে শুরু করলো। সেই সুবাদে মা ইয়া শান আমাকে আংকেল সম্ভোধন শুরু করলো।
বিমান বন্দরে নামার আগে মা মেয়ে দুজনেই তাদের মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা লিখে দিলো। তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলো কিন্তু আমি বেইজিং ইমিগ্রেশনে আবারো আটকে পরলাম। কারন তাদেরকে আমি হোটেল বুকিং দেখাতে ব্যর্থ হলাম। রাত ১ টায় এমন জ্বালাতন বিরক্তিকর। আশে পাশে বেক্কলের মতো তাকাতে লাগলাম। হঠাৎ করেই একটি মেয়েকে দেখে সাহায্য চাইলাম। জানালাম আমার সমস্যার কথা। বললাম আমার এক ফ্রেন্ড তার হাসপাতালে আমাকে ইনভাইটেশন করেছেন কিন্তু কাগজটা এই মুহুর্তে আমি খুজে পাচ্ছিনা। তখন মেয়েটা আমার কাছ থেকে আমার বন্ধুর মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে ফোন দিলেন। জানা গেলো আমার বন্ধুটি এয়ারপোর্টের বাইরে আমার জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। তখন সেই সাহায্যকারী মেয়েটি তার মোবাইলটি ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে বাড়িয়ে দিলেন এবং যথারীতি চেংচোং করে কি যেনো বললেন।
আহ্ কি শান্তি। ইমিগ্রেশন পার হলাম।
বাইরে এসে দেখি বন্ধু আমার মাইনাস ১০ ডিগ্রি শীতেও হাস্যজ্জল চেহারা নিয়ে লাউঞ্জে দাড়িয়ে আমার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছে।