জিনোম-৪

জিনোম একটি সময়োপযোগি গল্প। এক বসায় পড়ে ফেলার মতো কৌতুহল নির্ভর কাহিনী। বিজ্ঞান, জীবন, বৈচিত্র আর মৃদু ভালোবাসায় আপনাকে আন্দোলিত করবে….

পর্ব – ৪

আমি বিস্ময়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার সহজ সরল জীবনের আশে পাশে এতোকিছু হয়েছে হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।

  • তোর বাবা আমি আর সামান্থা মিলে একটি আলোচনায় বসলাম। সামান্থা বলো-
  • আমার সম্পর্কে যা জানার তাতো আপনারা জেনেই গিয়েছেন। এবার আপনাদের সম্পর্কে খোজ নিয়ে যা জেনেছি তা হলো-
  • এই বলে সামান্থা আমাদের মোটামুটি সকল তথ্য গরগর করে বলে গেলো। 
  • সে বলল, আমি জানি এই মুহুর্তে আপনার করোনাভাইরাসের জেনেটিক বিহেভিয়ার নিয়ে আপনারা গবেষনা চালাচ্ছেন। কিন্তু আপনারা এটা কাউকে জানাতে দিচ্ছে চাচ্ছেনা না। যাই হোক এতে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার যেভাবে চেষ্টা করছেন তা সফল হবার সম্ভাবনা শুন্যের কাছাকাছি।
  • এপর্যায়ে তোর বাবা বলল- আমরাও জানি আমাদের আয়োজন খুবই অপ্রতুল। কিন্তু কি করতে পারি বলো? আমাদের আর্থিক কোন সাপোর্ট নেই। তাছাড়া গোপনীয়তা বজায় রাখতে হলে আর্থীক সহায়তা পাবার কোন সুযোগ নেই।


 সামান্থা বললো-
  • আমার একটা প্রস্তাবনা আছে। আপনাদের সব কিছু শতভাগ গোপন থাকবে এই শর্তে আমি আপনাদের আর্থিক সহ সব ধরনের সহায়ত দিবো। কোথ্থেকে কিভাবে দেবো এটা আপনাদের দেখতে হবে না, কিন্তু নিশ্চিত থাকবেন আমাদের তিনজনের বাইরে এর কথা কেউ জানবে না। কিন্তু শর্ত এটাই থাকবে। যেহেতু আমি জিনোম নিয়ে কাজ করছি এবং আপনারাও কাজ করছেন সেহেতু আমরা যদি একত্রে কাজ করি তবে এর ফলাফলটা তুলনামুলক দ্রুত আসবে।
  • আমরা অবাক হয়ে সামান্থার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আগে হলে হয়তো তোর আব্বু এটাকে হেসেই উড়িয়ে দিতো। কিন্তু সেই মুহুর্তে সামনে বসা এই পিচ্ছি মেয়েটাকে পিচ্ছি বলে হেলাফেলা করা যাচ্ছে না।  আমরা এক দিন ভেবে দেখার জন্য সময় চাইলাম। 
  • একদিন নয়, সেদিন রাতেই আমরা সামান্থাকে ফোনে জানিয়ে দিলাম গোপনীয়তার শর্তে আমরা তার কথায় রাজি।
  • যেহেতু আশেপাশে কি হচ্ছে সেসব নিয়ে তোর কৌতুহল কম সেহেতু তুই এই ব্যপারগুলো ধরতে পারিসনি। তাছাড়া আমরাও চাইনি তোকে এসবে জড়াতে। এরপর আমাদের বাসায় সর্বোচ্চ স্পিডের ইন্টারনেট কনেকশন, প্রায় সুপার কম্পিউটারের গতিশিল কম্পিউটার, ল্যাবরেটরির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এসে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। সামান্থাই সব ব্যবস্থা করেছে।
  • অবসর সময় পেলেই আমরা তিনজন মিলে আলোচনা করতাম। তোর আব্বু জেনেটিক বিহেভিয়ার নিয়ে, সামান্থা ডিকোডিং নিয়ে আর আমি তাদের মধ্যকার সমন্বয় এবং সহায়ক হিসেবে কাজ করে যেতে লাগলাম। 

আমি আম্মুল দিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুদ্ধের মতো শুনছি। মনে হচ্ছে আম্মু গল্প বলছে। হঠাৎ মনে হলো আম্মু চুপ করে গেছে। আমি তখন কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

  • আব্বু মারা গেলো কেমন করে?
  • একটা ছোট্ট ভুলের জন্য এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেদিন আমি কিংবা সামান্থা কেউই ল্যাবে ছিলাম না। তোর আব্বুর অসতর্কতার কারনে সেম্পল এর জার এর সীল্ড কাভারটি একটু সরে যায়। তোর আব্বু হয়তো অন্য মনস্ক ছিলো। কাভারটি সে পুনরায় জায়গা মতো দিয়ে রাখে। কিন্তু ততখনে ভাইরাস তোর আব্বুর হাতে লেগে যায়। যেহেতু তখন করোনা ভাইরাস ডিটাকটর ছিলো আমাদের ল্যাবে সেহেতু কিছখনের মধ্যেই জানতে পারি তোর আব্বু ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। যেহেতু তোর আব্বুর ফুসফুসে সমস্যা ছিলো আগে থেকেই সেহেতু ৩ দিন যেতে না যেতেই তিনি মারা জান।

আম্মুর চোখ দিয়ে অশ্রু নেমে আসে। আমি তাকিয়ে থাকি তার  দিকে। কত বড় বড় ধাক্কা খেয়েছে আম্মু। 

লম্বা সময় ঘুমিয়ে কাটালাম। ঘুম না বলে তন্দ্রা বলা যায়। ঘুমের মধ্যে অন্য আর এক জগত চলে আসে। সেখানে আব্বুকে দেখলাম মন খারাপ করে বসে আছে। আম্মুকেও দেখলাম সাথে সাথে। তারও কেনো যেনো মন খারাপ। বায়োস্কোপের মতো এক দিক দিয়ে এসে এসে মানুষগুলো অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই সামান্থার বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা ভেসে উঠলো। সে অবশ্য থেমে নেই। হাত নেড়ে কিযেনো আমকে বলার চেষ্টা করছে। আমি সামনে ঝুকেও কিছু শুনতে পাচ্ছি না। আরো কতোশত হাবিজাবি দেখে ঘুম ভাংলো।

ঘরের এক কোনে হাটুতে মুখ গুজে বসে রইলাম। মাথায় যে চিন্তাগুলো আসছে সেগুলোকে এক সুতায় সাজাতে চেষ্টা করলাম। আব্বু, আম্মু, সামান্থা আমার কাছে কিছু চাচ্ছে। ওদের মধ্যে একন মৃত, একজন ধরাছোয়ার বাইরে, আর শুধু মাত্র আম্মু আছে পাশে। 

আমার যথারীতি চিন্তাগুলোকে একটু উল্টেপাল্টে ভাবতে চেষ্টা করলাম। জ্ঞান হবার পর থেকেই আমি জানি অথবা আমাকে বোঝানে হয়েছে যে, আমি অতি স্বাধারন একটি মানুষ। আমার মধ্যে অতিরিক্ত কিংবা অতিমাত্রায় কিছু নেই। আমার আম্মুর যুক্তি হলো সে চেয়েছে তার ছেলেকে স্বাভাবিক ভাবে বড় করতে এবং অন্য দশ জন স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন চালাতে শিখতে। আম্মুর সাথে সাথে আব্বুও বোধ হয় এটাই চেয়েছে।

অন্য দিকে আব্বু এমন এক বিষয় নিয়ে গবেষনা করেছেন যা সাধারণ কোন বিষয় নয় কিংবা সাধারণ মানুষ এসব বিষয় নিয়ে গবেষনা করার যোগ্যতা রাখেনা। তার মানে আমার আব্বু অসাধারণ এবং ব্রিলিয়ান্ট লোক ছিলেন। অন্য দিকে এসব কিছুর মধ্যে আম্মু আমাকে সব কিছু থেকে আগলে রেখেছেন, তার মানে আম্মুও একজন অসাধারণ মানুষের দায়িত্ব পালন করেছেন। 

দুজন অসাধারণ মানুষ আমাকে পৃথিবীতে এনেছেন, তাহলে আমার মধ্যে এমন কি কিছু নেই যা আমার আব্বু আম্মুর অসাধারণত্ব বহন করে?

আমি আগ্রহ নিয়ে ভাবনা এগিয়ে নিতে থাকলাম। এখন পৃথিবীর মারাত্মক ক্রান্তি কাল। শত প্রতিকুলতার মাঝেও আব্বু, আম্মু এমনকি সামান্থা পৃথিবীর জন্য কোটি মানুষের জন্য ভেবেছে। তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছে। কাজে লাগাতে গিয়ে একজন মারা গেছে, একজন হারিয়ে গেছে, আর আরেক জন আমার মা সব কিছুর মধ্যে থেকেও তার ছেলেকে আগলে রেখে সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা করার পরিবেশ দিয়েছে। কেনো? আমার কাছে কি তাদের কোন প্রত্যাশা আছে? আব্বুর ছিলো কিনা জানিনা, কিন্তু সামান্থার ছিলো এটা তার কাছ থেকে পাওয়া চিঠিতে তার অস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়। কিন্তু আম্মু—-। আম্মুকে কেনো আমি জিজ্ঞাস করছি না? দৌড়ে গেলাম আম্মুর কাছে।

আম্মু তার কম্পিউটারে বসে কাজ করছে। তার পেছনে গিয়ে কাধে হাত দিয়ে দাড়ালাম। আম্মু কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালো।

  • কিরে, কিছু বলবি?
  • আম্মু, তোমার সাথে কথা ছিলো।
  • তাহলে একমিনিট দাড়া, আমি ফাইলটা ফরোওয়ার্ড করে নিই।

আমি আর আম্মু সোফায় গিয়ে পাশাপাশি বসলাম। আম্মুর কাছে ঘেষে বসে তার দিকে ফিরে তাকিয়ে রইলাম কিছুখন। আম্মু কপাট অবাক হবার ভান করে ভুরু কুচকে আমার দিকে তাকালো।

  • কিরে, এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
  • আম্মু, তুমি কি বলতে পারো আমার জীবনে এমন কোন কিছু কি ঘটেছে যা অস্বাভাবিক কিংবা এমন কিছু কি হয়েছে যাতে প্রমান হয় আমার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা আছে?
  • হ্যা, আছেতো।
  • কি?
  • তুই ছোট বেলায় বিছানায় হিসু করে দিয়ে আমরা দেখার আগেই ইস্ত্রি দিয়ে শুকিয়ে ফেলতি।
  • মা, ইয়ার্কি না, সিরিয়াসলি বলো।
  • শোন আরিয়ান, তুই যেটা জানতে চাইছিস সেটা জানার জন্য আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নাই। তুই নিজেকে প্রশ্ন কর। আমার বিশ্বাস এ প্রশ্ন তুই কখনো নিজেকে করিসনি। 
  • আমি কিভাবে জানতে চাইবো?
  • এই ধর, তুই যখন খেতে বসে খেতে থাকিস তখন তোর অবচেতন মন তোকে অনেক কিছু খেয়াল করতে দেয়। তোর প্লেটের উপর একটা মাছি এসে বসলে তুই প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে খেয়াল করিস মাছিটি বসে বসে কি করে। সেটি কি করে মাথা নোয়ায়, কি করে দুপাশের দুপা দিয়ে মুখের মধ্যে ঘষাঘষি করি। উড়ে যাবার সময় এটি সমান্তরাল ভাবে উপরে উঠে নাকি বেকে উঠে। আবার তুই যখন কোন মানুষের সাথে কথা বলিস তখন তাদের কথার চাইতে তাদের আচরন কিংবা নড়াচড়া বেশি খেয়াল করিস। কি করে কথা বলে, কত দ্রুত বলে, কি করে হাসি দেয় এসব কিছু তোর মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আমি নিশ্চিত তুই এই ভাবনাগুলো তোর অবচেতন মন থেকে করিস। তোর স্বাভাবিক চিন্তায় এগুলোর কোন অস্থিত্ব নেই। কিন্তু আমি জানি, তুই এগুলো করিস। 
  • তুমি কিভাবে জানো আম্মু?
  • আমি দীর্ঘ জীবন জিনোম বিহেভিয়াল নিয়ে পড়ালেখা করেছি বাবা। এটা নিয়ে গবেষনায় তোর বাবাকে সহজগিতা করতে গিয়ে আমাকে অনেক কিছু জানতে হয়েছে। আর সেই জানাগুলো আমার মাধ্যে একটি ক্ষমতা তৈরী করেছে। আমাকে জেহেতু ডিএনও আর আরএনএ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে, গবেষনা করতে হয়েছে সেহেতু এগুলো এখন আমার কাছে স্বাভাবিক ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে। আমি এখন ভালো ভাবেই জানি তোর আব্বুর সমস্ত চিন্তা চেতনা তোর বংশানুতে জড়িয়ে আছে। হয়তো আমার বৈশিষ্টগুলোও থাকতে পারে। কিন্তু সুপ্ত অবস্থায় থাকা এ বৈশিষ্ট্যগুলো তোর মধ্যে আছে যে, এ ব্যপারে আমি নিশ্চিত। 
  • কিন্তু, আমিতো বুঝিনা, টের পাইনা!
  • আগে বুঝিসনি, কারণ আগে বোঝার প্রয়োজন হয়নি। এখন যদি মনে করিস তোর বোঝা উচিত, তবে অবশ্যই বুঝবি।



আমি আর কোন কথা বলিনি। চুপ করে আম্মুর ঘর থেকে চলে এসেছি। আমার ভাবনার যে দিকটি আম্মু আজ আমার সামনে উম্মুক্ত করেছে সেটার সাথে আমার যে পরিচয় হয়নি তা নয়। কিন্তু সে ভাবনাগুলো আমার কাছে কখনো গুরুত্বপুর্ণ মনে হয়নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার সময় হয়েছে।

আমি একটা খাতা টেনে আমার কর্মপরিকল্পনার একটি গ্রাফ আকার চেষ্টা করলাম। প্রথমতঃ আমি ভাবতে চেষ্টা করলাম বর্তমান অবস্থা নিয়ে। বর্তমান অবস্থায়ে পৃথিবী যে অবস্থায় আছে সে ভাবে হয়তো আর দুই কি তিন দশক পর পৃথিবী মানুষ শুন্য হয়ে যাবার কথা। আর এর জন্য যে ভাইরাসটি দায়ী সেটিকে নিয়েই আমার আব্বু গবেষনা করেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

যে কাজটি আগে কখনো করিনি সেটিই করলাম আজ। আব্বুর ল্যারেটরিতে গিয়ে ঢুকলাম। আম্মুর হাতের যত্নে এটি ধুলা মলিন হয়নি সত্যি কিন্তু এটি যে এখন একটি থেমে যাওয়া প্রাণ তা বোঝা যায়। দেখে বোঝার চেষ্টা করলাম কোনটার কি কাজ। যদিও এসব বেশিরভাগ কিছুই আমি জানিনা অথবা চিনিওনা। টেবিলের উপর লগ বইটা উল্টেপাল্টে দেখে বোঝার চেষ্টা করে নিরাশ হলাম। এগুলো আমি বুঝিনা। তবে নিত্য দিনের বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট, বিভিন্ন বিশ্লেষন এবং প্রয়োগ মাত্রা লিপিবদ্ধ করা তা বোঝা যায়। লগ বইটা তুলে নিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম। আম্মু আমাকে দীর্ঘ সময়ে যা বোঝালো তার সার কথা হলো-

 প্রতিটি প্রানীর বৈশিষ্ট্য তার জিনোমে সংরক্ষিত থাকে। এমনকি শুধু তার নয় তার পুর্বের বংশধারা এবং তাদের বৈশিষ্ট্যও জমা থাকে এই জিনোম এর ডিএনএ ও আরএনএ’তে। যেহেতু আমাদের গবেষনার বিষয় ছিলো জিনোম বিহেভিয়ার অর্থাৎ জিনোম এর বৈশিষ্ট্য এবং এর আচার আচরন নিয়ে সেহেতু আমরা একটি জিনে রক্ষিত সকল প্রকার তথ্যগুলোকে বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষা এবং গবেষনা করে অনেক ক্ষেত্রে ধারনা করে একটি একটি করে সিদ্ধান্ত পৌছাতাম কোন কোন পর্যায়ে এরা কি কি করে এবং কি কি করেনা। এটা একটি বিশাল দীর্ঘ এবং সময় সাপেক্ষ আর ধৈর্যের কাজ। তাছাড়া আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো। যদিও সামান্থার কারনে শেষ এক বছর আমরা অনেক প্রযুক্তিগত সুবিধা পেয়েছিলাম। কিন্তু এসকল হাইটেক এবং বিশ্লেষনধর্মী কাজের জন্য আমাদের ল্যাবরেটরিটা উপযুক্ত ছিলো না। শেষের দিকে আমরা তিনজন এ নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করেছি। বিশেষ করে করোনা মহামারিকে সামনে রেখে আমরা চেয়েছিলাম যদি কোন বিশাল ল্যাবরেটরি ব্যবহার করার অনুমোদন পাওয়া যায়। কিন্তু সামান্থা এবং তোর আব্বুর কারোই এ ব্যপারে কোন আগ্রহ ছিলোনা। কারণটা আমার মনে হয়েছে যে তাদের ধারনা বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা করে চলেছে কে এই করোনার প্রতিষেধক আবিস্কার করবে। এবং এজন্য তাদের নিজেদের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের নোংরা প্রতিযোগিতা। এই নোংরামিতে পরে গিয়ে আমরা বিপদে পরতে চাইনি। শেষের দিকে সামান্থাকে আমি খুব চিন্তিত থাকতে দেখেছি। লম্বা সময় সে ল্যাবরেটরিতে কাটিয়েছে। অনেক তথ্য বিশ্লেষন করেছে। আর মেয়েটের মধ্যে এতো ধৈর্য দেখেছি যে, আমার মনে হয়েছে সে হয়তো মানুষ নয়, কোন সপ্তম মাত্রার রোবট।

 তোর আব্বুর মৃত্যুতে আমাদের গবেষনা সম্পুর্ণই বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে সামান্থা এসে বসে বসে কি যেনো করতো। তোর আব্বু মারা যাবার পর থেকে আমি আর গবেষনায় মনোযোগ দেই নি। তবুও মাঝে মাঝে সামান্থা ডেকে নিয়ে কিছু বিষয়ে আলোচনা করতো। এক পর্যায়ে সামান্থাকে আমার কিছুটা অন্যরকম মনে হতো। আমার মনে হতো সে কিছু একটা ঘটাতে চাচ্ছে। কিন্তু কি, তা আমি জানতাম না। 

 সামান্থা কি চেয়েছে আম্মু? 

 সামান্থার জেনেটিক্স এর উপর মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা শক্তি রয়েছে। সে সহজেই জিনোম এর এনভেলপ, মেমব্রেন, নিউক্লিওক্যাপসিড ও পলি’র কোড ট্রান্সক্রিপট এনকোড করে এর ভেতরকার প্রোটিন এর গঠন বের করে ফেলতে পারতো। এ কাজে তার জুড়ি নেই। আমি অবাক হয়ে গেছি তার এমন অস্বাবিক ক্ষমতা দেখে। কিন্তু একটি ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরীর জন্য যেমন এগুলো জানা দরকার তেমনি সে ভাইরাসে বিহেভিয়ার সম্পর্কে ভালো ভাবে জানা থাকা দরকার। এক্ষেত্রে সে তোর আব্বুকে পেয়েছিলো। 

তোর আব্বু যখন মারা গেলেন তখন তার চিন্তায় অনেক পরিবর্তন আসে। সে ব্যপারগুলো নিয়ে অন্য ভাবে ভাবে। এবং আমার ধারনা সে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছে।

 তুমি কি জানতে যে সামান্থা নিজে থেকেই চলে যাবার চেষ্টা করছে?

 না, স্পষ্ট করে আমাকে ও কিছু বলেনি। কিন্তু আমি অনুমান করতে পেরেছিলাম। আমার সব সময় মনে হয়েছে বিশাল বড় কোন প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে কাজ করার সুযোগ হলে সে হয়তো তার লক্ষ্যে পৌছতে পারবে।

 আম্মু, এখন আমার কি করা উচিত?

 আমি ঠিক জানিনা, তোর কি করা উচিত? হয়তো সামান্থা বলতে পারতো।

পরবর্তী পর্ব: জিনোম-৫