রেইনড্রপ

প্রধান চরিত্র-১- আলিয়ান

আলিয়ানের সহযোগি- রাহ্নিক
আলিয়ানের গাড়ি- লুকিমো-৭
রেইনড্রপ (০১)

তুমুল বৃষ্টি, চারিদিক অন্ধকার। আজ অমাবস্যা।

কাদা আর পিচ্ছিল পথে পা ফেলে চলতে অনেক করসত করতে হচ্ছে। অন্য উপায় নেই। পেছনে ফেলে এসেছে প্রায় ৫ ঘন্টার দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার পথ। শরির প্রচন্ড ক্লান্ত আর অবসাদগ্রস্থ্য। বিশেষ করে পায়ের আংগুলগুলো আর ভার নিতে পারছেনা। অথচ এখনি থামার কোন সুযোগ নেই।
এমন নয় যে এমন বিপদসংকুল পথ চলা আলিয়ানের কাছে নতুন। ফেলে আসা জীবনের বিভিন্ন সময়ে তাকে অসংখ্য বার ছুটে বেড়াতে হয়েছে।
কিন্তু আজকের চলাটা ভিন্ন। আজ মনের মধ্যে জোর নেই, আছে শুধু রক্তক্ষরন। আজ সকালে ঘটে যাওয়া হৃদয় বিদারক ঘটনাটা আসলেই তার হৃদয়কে বিদীর্ন করে ফেলতে পেরেছে। খবরটা যখন তার কাছে এসেছে তখন সে ধাক্কাটা নেবার জন্য প্রস্তুত নয়।

শুধু একটা মাত্র বাক্য- “রাহ্নিক পরে গেছে, পালাও”।
হঠাৎই থমকে গেছে আলিয়ান। মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছে পৃথিবাটার মাঝ বরাবর কেউ চেপে ধরে এর গতি বন্ধ করে দিয়েছে। কিছুটা সময় তার হৃদয়ে উথালপাথাল ঝড় বয়ে গেলো। আর থেমেও গেলো সহসা।
সশব্দে চিন্তা করলো আলিয়ান-
”রাহ্নিক পরে গেছে মানে তার অবস্থান এখন ওদের কাছে স্পষ্ট। যে কোন মুহুর্তেই রাহ্নিকের পরিনতি আমাকেও ভোগ করতে হবে।”
তাকে ছুটতে হবে, এখনই। গোছানোর সময় নেই। যাষ্ট ছুটে বেড়িয়ে এলো ওর ভাড়া করা বাসা থেকে। গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলটা বড্ড ঠান্ডা লাগলো তার কাছে। মৃদু কাপুনি দিয়ে গাড়ির ইন্জিন জানান দিলো লুকিমো-৭ প্রান পেয়েছে। বিজ্ঞানের উন্নতির কারনে চাবি নামক বস্তুটা এখন অপ্রয়োজনীয়, তানাহলে চাবি খোজার জন্য আলিয়ানকে মুল্যবান কিছুটা সময় নষ্ট করতে হতো। এখন বোয়েমেট্রিক আর নার্ভাস সিস্টেম কোডারের মাধ্যকে যে কোন ইলেক্ট্রিনিক যন্ত্র তার মালিককে চিনে ফেলে স্পর্শ করার সংগে সংগেই।
লুকিমো-৭ গাড়ির স্বচ্ছ ক্রিস্টাল গ্লাস এখন তার রং বদলে কুচকুচে কালো করে নিয়ে আলিয়ানকে বাইরের চোখগুলো থেকে বাচিয়ে রাখার চেষ্ট করছে। যদিও আলিয়ান জানে আধুনিক বিজ্ঞান যেমন তাকে বিভিন্ন প্রকার ক্যামোফ্লেজ গ্রহনে সহযোগিতা করছে তেমনি অন্যপক্ষের লোকজনের কাছেও তার বিভিন্ন তথ্য পৌছে দিচ্ছে। হ্যাকিং আর সাইবার ক্রামের কারনে এখন কিছুই গোপন রাখা সম্ভব হচ্ছেনা।
কিন্তু আলিয়ান জানে তাকে যে করেই হোক সকল চোখ ফাকি দিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। তাই কিছুটা সময় নিজের গাড়ি করে যেয়ে রাস্তার ধারে গাড়ি ছেড়ে একটি পাবলিক বাসে চড়ে বসে। যানে এতেও সে গোপন থাকবেনা বেশিক্ষন। নির্ধারিত স্থানের অনেক আগেই সে গাড়ি ছেড়ে নেমে পড়ে পথে। বেশ কিছ পথ হাটার পর ছোট্ট নদীটি সাতরে পার হয়। 
নদী ছোট্ট কিন্তু এতে স্রোত প্রবল। অভিজ্ঞ সাতারু হলেও স্রোত আলিয়ানকে নিয়ে গেলো কিছুটা দুরে। পাহাড়ি নদীর উষ্ণ পানিতে গা ভাসিয়ে কিছুক্ষনের জন্য বিস্মৃত হলো আলিয়ান। ছোট্ট বেলাকার কথা মনে উকি দিলো সহসাই। কি চঞ্চলইনা ছিলো সেই সব দিনগুলো।
নদী পেড়িয়েই পাহাড়ি আর মেঠো পথ। কিছুটা পথ চলার পরই শুরুহলো বৃষ্টি। যে সে বৃষ্টি নয়, গভির ধারার বৃষ্টি। এরি মধ্যে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। গোধুলীর ফিকে আলোয় পথ চিনে নিয়ে এগিয়ে চলেছে আলিয়ান। বৃষ্টির ছটা গায়ে মুখে এসে লাগছে। এসব আলিয়ানের জীবনে নতুন নয়। কিন্তু সে পজিটিভ ভাবে নিতে শিখেছে। বৃ্ষ্টির তিক্ষ্ণ ফোটা ওর কোমল অবয়বে আছড়ে পরে তার মনে বিরক্ত তৈরী করতে পারছে ন। বরং আলিয়ান হাটার তালে তালে বৃষ্টিটাকে  মন ভড়ে উপলব্ধি করছে বোঝা যায়। মাঝে মাঝে নাই আকাশের দিকে মুখ উচিয়ে বৃষ্টিগুলোকে রাইট এংগেলে মুখে পরতে দিচ্ছে। অনুভুতিগুলো চুষে নিচ্ছে হৃদয়ে। তার খুব ভালো লাগে এ বৃষ্টি। যদিও আজ সময়টা বৈরি তারপরও....

একটানা প্রায় ৫ ঘন্টা হেটেছে বাস থেকে নামার পর। কোথাও থামার কথা ভাবেনি। কিন্তু ক্লান্তি এসেছে শরীরে, টের পাচ্ছে। জিপিএস প্রটেকটেড ডান হাতের ঘড়িটা জানান দিচ্ছে রাত ৮টা বেজে গেছে। তারাভরা আকাশের সামান্য আলোয়ই পথ চিনে হাটছে আলিয়ান। পাহাড়ি এবড়ো থেবেড়ো আর কাট জংগল ভরা পথে হাটতে গিয়ে গায়ের কয়েক জায়গায় গা জালানো কাটাকুটি হয়েছে। সেদিকে ভ্রক্ষেপ দেয়নি ও। নিরাপদ জায়গায় পৌছে তারপর সেগুলোর দিকে খেয়াল দেয়া যাবে। আরো ঘন্টা দুই এর পথ।

চলার মাঝেই ভাববার ফুরসত পেলো আলিয়ান। রাহ্নিক তার সহযোগি। সহযোগি মানে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জোগাড় করে দেয়। রাহ্নিকের মতো অনেকেই আলিয়ানকে সাহায্য করে। সেই রাহ্নিকের নেই হয়ে যাবার সংবাদ পেয়ে আলিয়ান কষ্ট পেয়েছে খুব। অবশ্য প্রিয়জন হারবার অভ্যেস তার ছোট থেকেই। রাহ্নিক ছেলেটা খুব কাজের ছিলো। বিশেষ করে কোন তথ্য প্রয়োজন হলে তাকে বললেই হলো, অল্প সময়েই তথ্য কি করে জেনো জোগাড় করতো ও।